ভদকা ও এক ভূতের গল্প

"একটা ভূতের গল্প হয়ে যাক", ফার্স্ট  পেগ এ চুমুক দিয়ে যশ বলে উঠলো। 

      কলেজের ফার্স্ট এমবি শেষ, মনটা উড়ু উড়ু। এদিকে মাসেরও শেষ, পকেট গড়ের মাঠ, তাই ইচ্ছে থাকলেও দিঘা পুরী যাওয়ার রেস্ত নেই। রবিবারের সক্কাল বেলায় ক্যান্টিন-এ ব্যাজার মুখে রাবারের মত ছিবড়ে লুচী আর পচা আলুর দম গিলছিলুম আমরা চার বন্ধু,আমি যশ নিকুঞ্জ আর অর্ক। অর্ক কে বাদ দিলে আমরা তিনজনেই কলকাতার বাবু। হোস্টেল প্রায় ফাঁকা, আর যারা ছিল তারা ভিক্টোরিয়ায় প্রেম করতে গেছে; হোস্টেল এ বসে আছি শুধু আমরা এই চার প্রাণী। হঠাৎ নিকুঞ্জ বলে উঠলো, "অর্ক, তুমনে বোলা থা না তুমহারে গাঁও মে এক পুরানা জামিন্দার হাভেলী হে, চলো উহা সে ঘুম কে আতে হে "। অর্কটা বেজায় কৃপণ, মিনমিন করে বলে ," সে তো ভূতুড়ে বাড়ি, সাপ খোপ থাকে, কেউ নেই এখন, সেখানে  যাবি?" কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা, রাত বারোটায় বেট করে পার্ক স্ট্রিট সিমেন্ত্রী ঘুরে এসেছি, আমরা  ভয় পাবো, কাভি নহি। তাই ঠিক হলো শুভশ্র শ্রীঘম, পরশু ভোর ভোর রওনা দেওয়া হবে অর্কর "জামিন্দার হাভেলী" দেখতে।
     তা পরশু হতে ঢের দেরি আছে, এই ফাঁকে অর্কর ঠিকুজি কুষ্ঠীটা একটু আলোচনা করে নেওয়া যাক। অর্কর দাদুর দাদু কোনো এক ইংরেজকে বাঘের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো, তার ফলেই এই জমিন্দারী লক্ষী লাভ। বাগদের (অর্ক বাগ) প্রভাব প্রতিপত্তিতে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত কিনা জানা যায়নি, কিন্ত ওদের কালী পুজোর পাঠার ঝোল খেয়ে চোঁয়া অম্বলের কথা ওখানকার লোকেদের মুখে মুখে আজও ঘোরে। 
      তা ভোর ভোর উঠে, চান করে, জয় মা দুগ্গা বলে আমরা তিনজন রওনা দিলাম (আমি, যশ আর নিকুঞ্জ; অর্ক একদিন আগেই চলে গেছে সাফ সাফাই করে রাখতে)। প্রায় ৭ঘন্টা বাসে ,তারপর নদীর খেয়া পেরিয়ে, মেঠো রাস্তায় ধূলো খেতে খেতে ট্রেকারে বাদুড় ঝোলা ঝুলে যখন পৌঁছলাম,তখন সবে সূর্য অস্ত গেছে। আমাদের নামতে দেখে একজন বুড়ো মানুষ গুটি গুটি পায়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো, "তোমরা অর্কর বন্ধু, এস আমার সাথে"। লোকটার পরণে লাল ধুতি, গলায় রুদ্রাখের মালা, মাথায় ইয়া বড় লাল টিকা, হারিক্যানের অস্পট আলোয় মুখটা ক্ষত বিক্ষত ।শাস্ত্রে বলে অজ্ঞাতকুলশীল লোককে বিশ্বাস করতে নেই, আমরা কিছুটা ভয়ে ভয়ে উনার পিছু নিলাম। গ্রাম বাংলায় সন্ধ্যেটা ঝুপ করে নামে। সময়টা যদ্দুর মনে পড়ে শ্রাবণ মাসের শুরু। সেইদিন সকাল থেকেই এদিকে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। জমির আলে হোঁচট খেতে খেতে জল কাদায় আমরা সামনের হ্যারিকেনের আলোক বিন্দুকে অনুসরণ করলুম। রাত্রিটা পূর্ণিমা ছিল, কিন্তু মেঘের জন্যে চারিধার অন্ধকার, শুধু বিদ্যুতের ঝিলিকে মাঝে মাঝে দূরের বাড়ি ঘর জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। হাঁটছি তো হাঁটছি, পথ আর শেষ হয় না,এদিকে সকাল থেকে পেটে কিছুই পড়েনি তেমন; পেটের মধ্যে পুরো ছুঁচোর কেত্তন চলছে। দাদুকে যতবার জিজ্ঞেস করি,"আর কদ্দুর",বাজখাই গলায় উত্তর আসে "সামনেই"। মনে মনে অর্কর গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো করতে করতে আমরা এগিয়ে চললাম। সাঁকো পেরিয়ে একটা বাঁশ বনের বাঁক নিয়ে এগিয়ে দেখি হারিক্যানের আলোটা উধাও। কিছু বুঝবার আগেই একটা জোরালো টর্চ মুখে পড়লো। আমার হাত পা তো ভয়ে পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে গেছে। বিরপুঙ্গব নিকুঞ্জ (হোস্টেল এ ও সেরকম দাবি করে) তো ডাকু বলে উল্টোদিকে দৌড়তে গিয়ে পা পিছলে দড়াম। "কিরে শখ মিটেছে গ্রাম ঘোরার?",দেখি অর্ক একটা ১০সেল এর টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অতিথি আপ্যায়ন করতে।
      মূল ফটকটা পেরোলেই একটা বিশাল দালান। বাড়িটা দেখে একটু আশাহত হলাম, নাহ কৃপণ geneটা বাগ পরিবারের patent নেওয়া।মহিষাদল বা ইটাচুনা রাজবাড়ির মতো বিশাল নয়, কিন্তু বাড়িটা নেহাত ফেলনাও নয়। দোতলা পাকা বাড়ি, সামনে বিশাল সারি সারি থাম দেওয়া ঠাকুর দালান। বিশাল পেল্লাই কাঠের দরজা ঠেলে আমরা ভেতরে ঢুকলাম। বৈঠকখানা টা বেশ বড়, এক কোনে রাখা আরামকেদারা, আর অন্যদিকে মেঝের ওপর ফরাস পাতা। অর্ক বললো, তোরা একটু বস, আমি চা জলখাবার নিয়ে আসছি; বলে উজবুকের মতো টর্চটা নিয়ে চলে গেল। খোলা জানলা দিয়ে অল্প জোৎস্নার আলো ঠিকরে আসছে, কিছুক্ষনে অন্ধকারটা গা সওয়া হয়ে যেতে ভালো করে ঘরটা লক্ষ করলাম। পুরোনো দিনের ঘর, সিলিং ঢালাই করা,সেখান থেকে একটা বড় ঝাড় লণ্ঠন ঝুলছে (বেলজিয়ান কাঁচের বোধহয়, কিছুটা ভাঙা)। একদিকে একটা বিশাল grandfather clock, দশটা বাজতে পাঁচ এ আটকে গেছে। আমরা যেদিকে বসে আছি,তার ওপর একটা বিশাল oil পেইন্টিং থেকে অর্কর দাদু মুখ ভেংচি কাটছে। অন্ধকারে টিকটিকি কোথায় টিকটিক করে উঠলো.....আমরা তিনজনেই একবারের চুপ,যেন এই বিশাল ঘরটা তার জঠরে তিনটে শিকার কে আটক করেছে; শুধু ছোবলের অপেক্ষা। কতক্ষন ঠিক মনে নেই, সম্মোহনটা ভাঙলো চিকেন পাকোড়ার গন্ধে! পেটপুজোর পর ঠিক হলো একবার ছাদে গিয়ে চারিধারটা দেখে নেয়া যাক। পুরোনো একটা spiral staircase দিয়ে আমরা উপরে চললাম। খোলা ছাদ, অনেক দূরে দু একটা বাড়ির আলো চোখে পড়ে, এখান থেকে ৫-৬কিঃমিঃ হবে কম করে। বাড়ির পূর্ব দিকে একটা এঁদো পুকুর, কচুরিপানায় ঢাকা। সেই দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে অর্ক বললো ,"ওই যে পুকুর দেখছিস ওতে আমার খুঁড়িমা গলায় কলসি বেঁধে suicide করেছিলো। কম বয়েসে বিধবা, কিন্তু বুড়ির বড়শিতে মাছ ধরার ও মাছ ভাজা খাবার খুব শখ ছিল। তা একবার দাদু এই নিয়ে খুব কথা শোনায়, তাতেই বুড়ি রাগ করে এই কান্ড করে বসে। সেই থেকে ওই পুকুর অভিশপ্ত, কেউ মাছ ধরলে বুড়ি তার অনিষ্ট করে....আমার ছোটকা তো তিনদিন জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারলো না ওই পুকুরে মাছ ধরার পর। আমরা যখন এই বাড়িতে থাকতাম, তখন বাড়িতে মাছ রান্না হলে মুড়োটা ওই পুকুরে দিয়ে আসা হতো ভেজে"। গল্পটা শুনে নাকি ঠান্ডা হওয়ায় গা টা শিরশির করে উঠলো। আচ্ছা ওই পশ্চিম দিকে যে আগুন জ্বলছে ওটা কি,আমি জিজ্ঞেস করলাম। অর্ক তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, ওটা শ্মশান। সবাই কয়েক মিনিটের জন্যে চুপ করে গেলুম, শুধু ব্যাঙ আর ঝিঝির শব্দ আমাদের নিস্তব্ধতাকে আরো প্রকট করে তুলল। হঠাৎ পিলে চমকানো আওয়াজে যশ বলে উঠলো, উফঃ কি মশা। তারপর অনেকটা স্বগোক্তি করে বলে উঠলো, " বাড়ির চারিধারে যে পরিমাণ ঝোপঝাড়, তাতে দু একটা মা মনসার জীবের দেখা মেলা দুর্লভ না। ভূতে না ঘাড় মটকালে, সাপের কামড়ে মরবো নিশ্চিত।চল নীচে যাওয়া যাক।"
          দোতলায় দুটো ঘর,তার মধ্যে একটায় শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বামুন ঠাকুর রান্না বান্না সব ওখানে রেখে বাড়ি চলে গেছে। এই বিশাল খুদিত পাষান এ আমরা চারটে প্রাণী কেবল।চিকেন গুলো এখনো পেটের মধ্যে নাচানাচি করছে,তাই এত তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। ঘরটা গুমোট,ঝুল বারান্দায় এসে আমরা চারজন বসলাম। এখান থেকে ওই এঁদো পুকুরের ভাঙাচোরা ঘাটটা তেরচা ভাবে দেখা যায়।কিছুক্ষন তাস খেলার বৃথা চেষ্টা হল,কিন্তু সবার মন যেন অন্যকিছুতে আটকে। যশ শেষে বললো, চল সবাই মিলে দুপেগ ভদকা ওই pomfret fry এর সাথে খেয়ে শুয়ে পড়ি।টর্চের ব্যাটারি অনেক্ষণ আগেই দেহ রেখেছেন, তাই একটা মোমবাতির আলোয় চারজন বসলাম গোল করে।
        প্রথম পেগ টা বানাতে বানাতে যশ বলে উঠলো," একটা ভূতের গল্প হলে মন্দ হতো না"!বাইরে তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, আকাশের মেঘ এর ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ অল্পসল্প উঁকিঝুঁকি মারছে; আওয়াজ বলতে ব্যাঙের ডাক আর দূরে শ্মশানের শেয়ালের হুক্কা হুয়া। মোমবাতির নিবু নিবু আলোয় অর্ক শুরু করলো।
      "ভূতের গল্প শুনবি, ভয় পাবি না তো।" আমরা ডাক্তারি ছাত্র,কত মড়া কেটেছি, ভয় কিসের, একসাথে তিনজনে প্রতিবাদ করে উঠলাম। একটা pomfret এ কামড় দিয়ে অর্ক বলতে লাগলো। আষাঢ়ে গল্প তোদের বলবো না, যা দেখেছি নিজের চোখে তাই বলছি। তখন আমি ক্লাস ১ এ পড়ি। বর্ষার ছুটিতে ঠিক এরকম এক রাত্রি তে আমরা ভাই বোনেরা এই বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছিলাম হ্যারিকেনের আলোতে। কাকুরা আর এক কোণে বসে তাস খেলছিল। মা কাকিমা আর পিসিরা অন্য ঘরে ঠাম্মির সাথে গল্প করছিল। (অর্কদের চার কাকু, ওর বাবা কে নিয়ে ,আর ৪ পিসি; সেই সময় দুই পিসি ও দুই কাকুর তখনও বিয়ে হয়নি। )। নিচের ঘরের গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক টায়  ঢং ঢং করে নটা বাজতেই আমরা ভাই বোনেরা উকি ঝুঁকি করতে লাগলাম। বাবা বাজখাই গলায় বললো,যাও বাবাই (অর্কর ডাক নাম),মা কে বলো খাবার ববস্থা করতে। আমি তো নাচতে নাচতে মাকে বলতে গেলাম। মা আর কাকিমা খাবার বাড়তে গেলো ডাইনিং রুমে এ। তোরা যে ঘরটায় বসেছিলি নীচে,ওর পাশের ঘরটায় ডাইনিং কাম কিচেন আমাদের। তা আমি আর ভাই তখন ঠাম্মির কোলে মাথা রেখে গল্প শুনছি, এমন সময় রান্নাঘর থেকে বিকট চিৎকার।  সবাই মিলে ছুটে গেলাম রান্নাঘরে,দেখি মা র মুখ ফ্যাকাসে, আর কাকিমার হাতটা ভাতের হাঁড়ির দিকে পয়েন্ট করা। সামনে ঝুকে দেখি ভাতের হাঁড়ির ভেতর একটা ঘুঁটে রাখা। বাকি তরকারি খাবার দাবারের ঢাকনা সরিয়ে একই দৃশ্য। এই সামান্য জিনিসের জন্যে এত চিৎকার চেঁচামেচির জন্যে মা বাবার কাছে একটু বকাই খেলো ভালরকম। গ্রামে তো শত্রুর অভাব নেই, একাজ তাদেরই কারো। টর্চের আলোই চারিধার তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পাওয় গেলো না,এমনকি কোনো পায়ের ছাপ ও না। 
    রাত দশটা,সবার খিদে পেয়েছে ভালোরকম। তাই ঠিক হলো,ওপরের ভাত আর তরকারি ফেলে দিয়ে বাকিটা খাওয়া হবে,কিন্তু রান্নাঘরে না ,পাশের বৈঠকখানায়। এবার প্রথমে বাবা খেতে বসলো।ততক্ষনে কাররেন্ট চলে এসেছে। যেই না পাতে ভাত দেওয়া, অমনি রুমের শিলিং (শিলিং টা কিন্তু পাকার ঢালাই করা)  থেকে হুড়মুড় করে একগাদা ছাই পড়ে গেলো ভাতে। পাকা বাড়ির ছাদ থেকে ছাই পড়ে  কি করে? আমার তো দেখে চক্ষু চড়কগাছ।মা কাকীমা আর পিসীদের সম্মিলিত  চিৎকার আর কান্নার রোলে ততক্ষনে পাড়া প্রতিবেশীরা হাজির।(ওরা ভেবেছিল ডাকাত পড়েছে!)। পাশের বাড়ির জগা কাকু মা কে বললো,বৌদি আমায় ভাত বেড়ে দাও তো,দেখি তোমাদের ভুত কি করে আমার। কি আশ্চর্য,এবার কিছুই হলো না। সবাই যখন জিনিসটা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে,ভুত তার দ্বিতীয় খেলটা দেখালো - দাদুর ওই বিশাল oil পেইন্টিং টা ধাঁই করে উল্টোদিকের দেওয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়লো, সঙ্গে সঙ্গে ঘড়িটাও বিগড়ে গিয়ে ১১টার জায়গায় ৩টে বাজতে লাগলো (পরে শুনেছি খুঁড়িমা নাকি তিনটের সময় আত্মহত্যা করেন)। এবার আর শুধু একটু ছাই না, সিলিংয়ের থেকে মুষলধারায় ঘুঁটে, বঁটি এমনকি মাছ ভাজাও পড়তে লাগলো। ওপরে ছাদ এ হঠাৎ ধুপধাপ আওয়াজ, তার সাথে দোতলার জানলায় জোরে জোরে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে বাইরে থেকে। এসব কিন্তু অন্ধকারে হয়নি, পুরো গ্রামের সামনে ইলেক্ট্রিসিটির আলোয় হয়েছে, বিশ্বাস না হলে কালকে গ্রামের যে কাউকে জিজ্ঞেস  করতে পারিস।" আমাদের তখন আক্কেল গুড়ুম অবস্থা, চুপ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অর্কর গল্প শুনে যাচ্ছি। তারপর.....আমি জিজ্ঞেস করলাম। অর্ক উত্তর দেওয়ার আগেই ঘড়িতে ঢং ঢং করে তিনটে বেজে উঠল। ভয়েতে দেখলাম অর্ক ও কাঁটা হয়ে গেছে, অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, বন্ধ ঘড়ি বাজে কি করে?! হঠাৎ একটা দমকা হওয়ায় মোমবাতিটা ধুপ করে নিবে গেল;বাইরে মেঘটার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মারছে , জ্যোৎস্নার আলোয় দেখলাম একটা সাদা কাপড় পরে কে যেন ওই এঁদো পুকুরের ঘাটে বসে আছে,হাতে একটা বড়শির মতো কিছু, বড়শির ফটনাটা কচুরিপানার মাঝে একটু ফাঁক করেছে, আর সেখানে একটা মাছ ঘাই মারছে....সাথে সাথেই কানে এলো একটা বিশ্রী রকম মানুষের গোঙানির আওয়াজ। চারজনই পড়ি মরি করে দৌড়ে ঘরে গিয়ে বিছানায়-- তারপর কি হয়েছিল মনে নেই।
      ঘুম ভাঙল পরেরদিন দরজায় ধাক্কার আওয়াজে। দরজা খুলে রোদে চোখ ঝলসে গেল, কিছুক্ষন পর ঠাহর করলুম কালকের কাপালিক দাদু সামনে দাঁড়িয়ে। এই তোমাদের বিদ্যে বুদ্ধি,সকাল ১০টা অবধি ঘুমোচ্ছে! আমি নীচে অপেক্ষা করছি,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আমার বাড়ি চলে এসো, সেই কখন থেকে তোমাদের দিদিমা জলখাবার তৈরি করে অপেক্ষা করছে।
 ভাগ্যিস দাদু বারান্দায় যায়নি! দাদু নীচে যেতেই আমি চট করে বারান্দায় এলুম কালকের কুকর্মের প্রমান হাপিস করতে। গিয়ে দেখি একটা কালো হুলো বেড়াল কালকের আধখাওয়া পমফ্রেটটা সাবাড় করছে মনোযোগ দিয়ে, আমার উপস্থিতির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ততক্ষনে যশ ও দাঁতে brush নিয়ে এসে পড়েছে। আমায় খোঁচা দিয়ে বললো,ওই দেখ অর্কর খুড়িমার ভূত-- দেখি পুকুর পাড়ের ঝোপে একটা সাদা ছেড়া শাড়ি আটকে আছে,কালকের ঝড়ে!

Comments

Popular posts from this blog

Bromo র চিঠি

Bai tu long bay.....the land of the dragons

Sri Lanka - the land of experiences!