ভদকা ও ভূতের গপ্পো - পার্ট ৩
এত ঘন ঘন ভূতের গপ্পো তুই পাস কোথা থেকে রে, নিকুঞ্জ আমায় জিজ্ঞেস করলো? তুই কি আমার মত গাঁজা টেনে এসব লিখিস?
পুরো java তে এতদিন এক পেগ মদ না খাওয়া নিকুঞ্জ ( ইন্দোনেশিয়া মুসলিম দেশ, তাই মদ পাওয়া যায় না, যদিও আমরা একদিন beer খেয়েছি Tumpak sewa তে,কিন্তু beer কি তার কৌলিন্য খুইয়ে হুইস্কি স্কচ এর জাতে উঠতে পেরেছে?) bali তে এসে পুরো তিন বোতল ভদকা কিনে ফেলেছে। নিকুঞ্জের অবস্থা অনেকটাই জলবিহীন মাছের মত, এতদিন ছটফট করছিল, আজকে সুযোগ পেয়ে শুকনো সাহারা মরুভূমিতে সবুজের বিজয় ধ্বজা ফরফর করে ওড়াচ্ছে। এইবারের আসর বসেছে Alam Dasa Homestay তে,Tabunan, মধ্য Bali। প্ল্যান টা হঠাৎ করেই হয়ে গেলো। আমার বন্ধু অভিক,একদিন ফোন করে বলল যে ও East Java তে volcano আর waterfalls এর ছবি তুলতে যাবে।আমি তো ব্যাচেলর মানুষ, ঘুরতে যেতে সব সময় রাজি। নিকুঞ্জ কে বলতে ও তো প্রায় চেয়ার থেকে পড়েই যাচ্ছিল, বললো,আরিব্বাস! Volcano r ছবি? আমি বললাম সাথে Borbodur আর Prambanan temples ফাউ। এক কথায় রাজি। আমাদের সাথে জুড়লো আর একজন পাইলট, ভাস্কর.....ও অভিক এর বন্ধু।
তা, Yogakarytai এসে নিকুঞ্জ তো দিকভ্রান্ত নাবিকের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগল,আর ছবি তুলতে লাগলো। Borbodur এর সূর্যদয় হোক বা Parambran এর সূর্যাস্ত। সব কিছুই ওর ক্যামেরা বন্দী হওয়া চাই। Mt Bromo তে চড়ে ও এতই মোহিত হয়ে পড়ল যে খস খস করে এক পাতা প্রেমপত্র লিখে ফেললো ওর প্রেমিকা কে। তো আজকেই শেষ রজনী, কাল ভোরের আলো ফুটলেই আমরা যে যার মতো নিজেদের ঘিসা পিটা জিন্দেগিতে ফিরে যাব। তাই এই all boy's adventure কে স্মরণীয় করে রাখতে, নিকুঞ্জের তরফ থেকে আজকের পার্টি। আসর বসেছে নিকুঞ্জের রুমে , ঠিক হোটেল রুম না, জায়গাটা একটা traditional Balinese হোম, আর নিকুঞ্জের ঘরটা যেন একটা মন্দির। অপূর্ব সব কারুকার্য। ভূতের গপ্পো লিখতে গিয়ে ট্রাভেল ব্লগ লেখা উচিত না, গল্প শেষে কয়েকটা ছবি না হয় দিয়ে দেবো। তো সবে দুই পেগ, নিকুঞ্জ বলে উঠলো, what about you, Captain Avik, did u see any Ghost? বুঝলাম,মালটার চড়েছে। ইন্ডিয়ান ভদকা ভেবে গ্যাপ না দিয়ে গাপ গাপ করে রুশ ভদকা গিলছে। ( মাতাল হলে নিকুঞ্জ কুইন্স ইংলিশ এ কথা বলে কিনা!) অভিক পাত্তা দেয়ার আগেই,ভাস্কর বলে উঠলো, মেইনে দেখা তো নেহি,লেকিন মেহসুস কিয়া। ভাস্কর তারপর হিন্দি তেই বলেছিল, আর নিকুঞ্জ পাক্কা Brit English এ,কিন্তু আমি তো দুটোতেই কাঁচা,তাই মাতৃভাষায় বলছি।কিছু ভুল চুক হলে, আগে থেকেই Mrichadi Dukhdam।
এবার যা লিখছি তা ভাস্করের ভাষায়। তখন আমি চার্টার ফ্লাইট এর কো-পাইলট ছিলাম। একবার ফ্লাই করে এসেছি চেন্নাই তে, থাকতে দিয়েছে Trident hotel এ। চার্টার ফ্লাইট অনেকটা ওই প্রাইভেট ক্যাব ড্রাইভার এর মত, মনিবের কাজ শেষ হয়ে গেলে, আবার বেরিয়ে পড়। তো, পরেরদিন flight ছিল আমার ৭টা তে। তার আগে যদি বস্ এর কাজ শেষ হয়ে যায়, হোটেল কে বলা থাকে ক্যাপ্টেন কে wake up call দিয়ে দিতে। আমি রুম এ গিয়ে টিভি তে খবর চালিয়ে চান করতে গেলাম। হঠাৎ দেখি, থুড়ি শুনি যে খবরের জায়গায় michael jackson er গান চলছে। শাম্পু মাখা মুখে উঁকি মেরে দেখি, MTV চলছে। ভাবলাম, বোধহয় loose কানেকশন। স্নান সেরে বেরিয়ে টিভি অফ করে ঘুমোতে গেলাম। ঘুমের কোন phase এ ছিলাম মনে নেই, হঠাৎ টেলিফোন টা বেজে উঠলো, ওপারে এক সুন্দর সুরেলি গলায় একটি মেয়ে বলে উঠলো, captain, this is your wake up call,your flight leaves in 1 hour. Please be ready and on time. কি আর করা যাবে, ঘড়ির রেডিয়াম ডায়াল এ দেখলাম ২টো বাজে। ১০মিন এ রেডি হয়ে লবি তে চলে এলাম। এসে বসে আছি, ১০মিন, ২০মিন....৩০মিন। ক্যাপ্টেন বা ক্রু বা pick up car, কারো দেখা নেই। বাধ্য হয়ে রিসেপশন ডেস্ক এ বসা ছেলেটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, excuse me, I have a flight at three, but the captain is not here still. Can you call him. This is my key, I will be checking out.
ছেলেটি আমার হোটেলের key নিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো, যেনো আমি তাকে প্রপোজ করে বসেছি। আমি তার এই তন্দ্রা ভাঙ্গানোর জন্য,আবার একটু কড়া স্বরে বলতে গেলিম, can you please..... আমার কথা মাঝ পথে বাধা দিয়ে ছেলেটা বলে উঠলো, but Sir, your flight is at seven and wake up call at six.
এবার আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো, are you kidding? A lady just called me from the reception and .... ছেলেটি আবার মাঝ পথে কেটে বলতে লাগলো (মনে মনে তো রাগ তখন সপ্তমে, কি বেয়াদপ ছেলে, ভুল করে এখন সাফাই গাইছে....দাড়াও তোমার বারোটা বাজাচ্ছি।)
Sir,you are mistaken. We don't have any female staff at reception in night shift,as per company policy, you can check our shift list, I have been here at this station since 9pm. বলে একটা কাগজ আমার নাকের কাছে ধরলো। চশমাটা ঠিক করে দেখলাম,সত্যিই তাই। আমি তো তখন শীতের রাত্রে দর দর করে ঘামছি। ছেলেটা বলেই চলেছে এদিকে, Sir, you can go and rest in your room, I will call you at six. আমি বললাম পাগল, এই বসলাম তোমার সামনে এই লাউঞ্জে, আমি আর একচুল এখান থেকে নড়ছি না।
ভাস্কর বলা শেষ করতেই, নিকুঞ্জ বলে উঠলো, এর মধ্যে ভূত কোথায় দেখলেন? ভাস্কর, বিজ্ঞের মত বললো,সবকিছু কি দেখতে হয় ডক্টরসাহেব, কিছু অনুভব করতে হয়। বাকি তোমার ওপর।
আমি একবার ভূত দেখেছি।
তুই আবার তোর সেই গ্রামের বাড়ির ভূত কে এই Bali তে টেনে আনিস না, ওদের পাসপোর্ট নেই, ইমিগ্রেশন আটকে দেবে ,নিকুঞ্জ বলে উঠলো।
আমি একটা ঘটনা জানি, ভাস্করের মতো অতটা ভয়ের না, কিন্তু কারো যখন আর কোনো গল্প মাথায় আসছে না, এটাই শোনো, অভিক বলে উঠলো।
কোনটা,ওই কুয়েতের হোটেল, যেখানে রাত্রে pillow scent দেয় ঘুম ভালো হবে বলে, ভাস্কর বললো। ও,যেটা সাদ্দাম বম্ব করেছিল আর ৩০০জন গেস্ট মারা গিয়েছিল, না না, ওতে তো ভূত দেখা যায় না, জাস্ট ওই তুই যেরকম বোল্লি, মেহসুস্ করা যায়। ওতে আমাদের নিকুঞ্জ ভাই মানবে কেনো? তার থেকে এই গল্পটা better।
আমি তখন গেছি মোনাল পাখির ছবি তুলতে, পেপার এ খবর এসেছে যে একজোড়া হিমালয়ান মনাল কে দেখা গেছে Mayodiya পাস এর কাছে, অরুণাচল প্রদেশ এ। জায়গাটা দিবাং valley তে, রোয়িং যাওয়ার পথে পড়ে, খুবই জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। তো mayodiya পাস এ থাকার জায়গা একটি, এক পরিত্যক্ত PWD গেস্ট হাউস। চালায় এক বুড়ো, সবাই তাকে তেজু বলে ডাকে, আর তার চটপটে নাতনি। সময়টা শীতকাল, এমনিতেই চারিদিকে বরফ। বিল্ডিং এ কোনো ইলেকট্রিক কানেকশন নেই, সম্বল একটি emergency light, তাও শুধু ডাইনিং রুমে। রাত্রে তেজু বা তার নাতনি, কেউ থাকে না, এমনকি ওই সবেধন নীলমণি ইমারজেন্সি লাইট খানাও নিয়ে চলে যায় নিজেদের বাড়িতে চার্জ দিতে। তো, রাত্রে রুটি আর মাংসের ঝোল খাইয়ে, Tezu আমাদের টা টা bye bye করে চলে গেলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো, ভালো করে দরজা লাগাবেন, আর একটু মদ তদ খেয়ে ঘুমোবেন, নইলে ঘুম আসবে না। কাল সকালে নাতনি আপনাদের চা আর ব্রেকফাস্ট নিয়ে যাবে। ওরা চলে যেতেই,একটা ভয়ঙ্কর অন্ধকার আমাদের গ্রাস করলো। চট করে হেড ল্যাম্প টা (miners দের যেরকম থাকে ) জ্বালালাম,ওর ব্যাটারি শেষ হতে মিনিমাম ১২ঘণ্টা লাগবে। তারপর ক্যাপ্টেন Andrew সঙ্গে কয়েক পেগ রাম মেরে, দুজনে যে যার ঘরে ঘুমোতে গেলাম। ভাস্কর বললো, এ কি সেই এন্ড্রু যে ৫ বছর 23M congo rebels দের প্লেন চালাতো, আর তারপর যুদ্ধের শেষ দিকে পাহাড় টপকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে এসেছিল। অভিক একটা ছোট্ট হুম দিয়ে আবার বলতে লাগলো। দরজা ভালো করে লাগিয়ে, ঠিক করলাম হেড ল্যাম্প জ্বালাই থাকুক; ভূতের ভয়তে নয়, পোকা মাকড় আর সাপেদের ভয়। বাইরে ভালই ঠান্ডা ছিল, প্লাস রাম এর ইফেক্ট, ঝি ঝির আর শেয়ালের ডাক; সব কিছু মিলিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। হঠাৎ কানের কাছে শুনতে পেলাম, মিহি মোলায়েম এক মেয়েলি কণ্ঠস্বর, "উঠিয়ে সাহিব, সুভা হো গয়ী হেইন"। ধড়মড়িয়ে উঠে চোখ খুলে হেড টর্চের স্পষ্ট আলোয় দেখি এক মেয়ের ছায়া রুমের এক দিক থেকে অন্য দিকে হেঁটে ,দেয়ালের গা ঘেঁষে বন্ধ দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। শীতের সকালে দর দর করে ঘামতে ঘামতে পাশের ঘরে এন্ড্রু র দরজায় সজোরে কড়া নাড়িয়ে বললাম, অভিক here । দরজাটা হাট করে খুলে গেলো, ওপাশে এন্ড্রুর ফ্যাকাশে মুখ, অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলো, who was that girl ? দুজনে চুপ করে আলো জ্বেলে একসাথে বসে থাকলাম, যতক্ষণ না বাইরে থেকে তেজুর নাতনির গলার আওয়াজ পেলাম।বাইরে তখন হালকা ফর্সা হয়েছে , গরম চা এ চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম, আসল ব্যাপারটা কি বলো তো?
ও, আপকো এলার্ম clock গার্ল দিখাই দিয়া। তব তো আপকা দিন শুভ জয়েগা। দিনটা ভালোই গিয়েছিল, monal এর দেখা পেয়েছিলাম। পরে জানলাম যে ওখানে এক নেপালি careraker ও তার স্ত্রী থাকত। মেয়েটি কোনো অজ্ঞাত কারণে গায়ে আগুন লাগিয়ে সুইসাইড করে।
নিকুঞ্জ এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিল, হঠাৎ বলে উঠল, তুমি তো গুরু আমার বন্ধুর থেকেও বেশি গাঁজাখুরি গপ্পো জানো। অভিক একটু গম্ভীর ভাবে বললো, তোমার chatgpt কে জিজ্ঞেস করো Mayodiya গেস্ট হাউস সম্বন্ধে, দেখো সে কি বলে।
নিকুঞ্জ আর তর্কে গেলো না, গুনগুন করে গান ধরলো। অভি না যাও ছোর কর, এ দিল অভি ভরা নেহি......। আমি বললাম, চল উঠি এবার, কালকে আবার সবার ফ্লাইট আছে। আর পারলে সামনের waterfall তাও দেখে আসা যাবে। এই বলে সবাই এক একে নিজেদের রুম এ গেলাম।
কি ভাবছেন, গল্প এখানেই শেষ। না না, একটা ছোট্ট সংযোজন আছে, একটু ধ্যার্য ধরে বসুন।
পরেরদিন সকালে নিকুঞ্জ কে ডাকতে গিয়ে দেখি,বেচারার উস্কো খুস্কো চুল, চোখের নিচে কালি। জিজ্ঞেস করলাম,কি রে, কাল রাত্রে ঘুমোস নি?
তুই আওয়াজ পাস নি?
কিসের আওয়াজ?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে নিকুঞ্জ বলতে লাগলো, তোরা তো চলে গেলি,আমি বাড়িতে ভিডিও কল করলাম। বউ আর বাচ্চারা বললো, তোমার পেছনে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে কেনো ? আমি বললাম, ধুৎ,তোমাদের চোখের ভুল। ভিডিও কল এ ওদের রুম টা দেখলাম। তারপর যেই না শুয়েছি, অমনি একটা বাচ্চা মেয়ের কান্না। ভাবলাম, বোধহয় বেড়াল কাঁদছে। কিছুক্ষণ সেই কান্না চলল, তারপর হঠাৎ ধুপ ধাপ আওয়াজ ছাদের ওপর,যেনো কেউ মারপিট করছে, আর বিকট আর্তনাদ(ছাদ ছিল টালির)! আর তার সাথে সেই কান্না আওয়াজ। ভয়ে তো আমার আত্মা খাঁচাছাড়া। AC ১৮* করে লেপ মুড়ি দিয়ে আলো জ্বেলে বসে ছিলাম সারারাত। ততক্ষণে homestay এর মালকিন এসেছে আমাদের ব্রেকফাস্ট এ ডাকতে। আমি জিগ্গেস করলাম, Was there any Cat or monkey here last night.
No, this property doesn't have any cat. And Monkeys are not found in this part of Bali.
আমি আর নিকুঞ্জ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। দুর থেকে অভিক ডাকছে, তোদের হলো? রৌদ বেরিয়ে গেলে waterfall এর ছবি কিন্তু ভালো আসবে না!
নিকুঞ্জ বিড়বিড় করে বলল, দেবা না জনন্তি, কুতো মনুষ্য।
NB: আমি জানি ভূতের গল্প এ প্রুফ লাগে না,কিন্তু নিকুঞ্জ বলল,কয়েকটা ছবি দেওয়া যেতেই পারে। বাকি , বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু,তর্কে বহুদূর।
নিকুঞ্জের রুমে দরজা.....ভাগ্যিস রাত্রে খোলেনি!
নিকুঞ্জের তোলা কিছু ছবি (ওর রিকুয়েটস এ দেওয়া!)
Comments
Post a Comment